Donate and keep the blog alive
Monday, May 31, 2010
বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়ল এভারেস্টের চূড়ায়। বাংলাদেশের যুবক মুসা ইব্রাহীম পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এভারেস্টের শিখরে পা রাখলেন গতকাল রোববার ২৩ মে নেপাল সময় সকাল সাড়ে আটটার দিকে। ৩০ বছর বয়সী মুসা একমাত্র বাঙালি যিনি এভারেস্ট জয় করলেন। মুসা ইব্রাহীম গত ২০ এপ্রিল এভারেস্টের তিব্বতের অংশ দিয়ে অভিযান শুরু করেন। তিনি ‘হিমালয়ান গাইডস নেপাল’-এর সহযোগিতায় এই অভিযানে অংশ নেন। হিমালয়ান গাইডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঈশ্বরী পাড়ওয়াল প্রথম আলোকে টেলিফোনে নিশ্চিত করেছেন, ২৬ জনের একটি দল গতকাল এভারেস্টচূড়ায় উঠতে সক্ষম হয়েছে। তাঁদের একজন বাংলাদেশের নর্থ আলপাইন ক্লাবের মুসা ইব্রাহীম। ১৪ জন নেপালি শেরপা ছাড়াও এভারেস্ট বিজয়ীদের ওই দলে ছয়জন যুক্তরাজ্য, তিনজন মন্টেনিগ্রো ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। মুসার সহযোগী ছিলেন দুজন নেপালি শেরপা।
ঈশ্বরী পাড়ওয়ালকে উদ্ধৃত করে কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের উপ-মিশনপ্রধান নাসরিন জাহান টেলিফোনে ও মেইল বার্তায় প্রথম আলোকে মুসা ইব্রাহীমের এভারেস্ট জয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।তিনি বলেন, মুসা প্রথমে ওয়্যারলেস রেডিও থেকে এভারেস্ট বেসক্যাম্পে খবরটি পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। নাসরিন জাহান এই সাফল্যের খবরটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন বলে জানান।
ঈশ্বরী পাড়ওয়াল প্রথম আলোকে জানান, মুসা আজ (সোমবার) সন্ধ্যার দিকে অগ্রবর্তী বেসক্যাম্পে ফিরে আসবেন। আগামীকাল তিনি মূল বেসক্যাম্পে ফিরবেন। তারপর তিব্বতিয়ান মাউন্টিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বিজয়ীদের সনদ দেওয়া হবে। এই সনদ পাওয়ার পরই মুসা ইব্রাহীম এভারেস্ট বিজয়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবেন। তার আগে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাওয়া যাবে না।
মুসা ইব্রাহীমের অভিযান-সহযোগী মুক্তিনাথ ট্রাভেলসের কমল আরিয়াল কাঠমান্ডু থেকে সকালে মুসার স্ত্রী উম্মে সরাবন তহুরাকে ই-মেইলে সুখবরটা জানান। এরপরই মুসার এভারেস্ট বিজয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক, বিভিন্ন ব্লগসহ গণমাধ্যমে খবরটি প্রচারিত হয়। এরপর রাতে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেল, বিবিসি ও এবিসি রেডিওতেও বাংলাদেশের এভারেস্ট জয়ের খবরটি প্রচার করা হয়।
কমল আরিয়াল প্রথম আলোকে ই-মেইলে জানান, এভারেস্টে ওঠার পর মুসা ইব্রাহীম প্রথমে বেসক্যাম্পে বার্তা পাঠান। বেসক্যাম্প হিমালয়ান গাইডকে ওই বার্তা পৌঁছে দেয়। হিমালয়ান গাইড প্রথমেই সে বার্তা আরোহীর নিকটজনকে জানান।
প্রসঙ্গত, সব পর্বতারোহীর ক্ষেত্রেই এই প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক তথ্য পাওয়া যায়। মুসা ইব্রাহীমের ক্ষেত্রেও এই প্রচলিত প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন ছিল। এভারেস্ট বিজয়ের ক্ষেত্রে বেসক্যাম্পই প্রাথমিক তথ্যের একমাত্র সূত্র। এরপর আরোহী নেমে এলে তথ্য-প্রমাণসহ তাঁর এভারেস্ট বিজয় নিশ্চিত করা হয়। বেসক্যাম্পে না পৌঁছানোয় গত রাত পর্যন্ত মুসা ইব্রাহীমের সঙ্গে কথা বলা বা তাঁর সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।
প্রথম আলোর রস+আলোর নিয়মিত লেখক অনিক খান কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছেন। তিনিও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর সঙ্গে সরাসরি কথা বলে মুসার এভারেস্ট বিজয়ের তথ্য জানিয়েছেন।
মুসা ইব্রাহীমের জন্ম ১৯৭৯ সালে লালমনিরহাটের মোগলহাটে। বাবা আনসার আলী, মা বিলকিস বেগম। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে মাস্টার্স করেন। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও মাস্টার্স করেন।
মুসা দীর্ঘদিন প্রথম আলোয় সাংবাদিকতা করেন। বর্তমানে তিনি ডেইলি স্টার-এ সহসম্পাদক হিসেবে কর্মরত।
২০০২ সালে অন্নপূর্ণা ট্রেইলে অভিযানের মধ্য দিয়ে মুসা স্বপ্নপূরণের পথে অগ্রসর হন। সেবার উঠেছিলেন ১২ হাজার ৪৬৪ ফুট। এরপর তিনি একটার পর একটা পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ ও অভিযানে অংশ নিতে থাকেন। তিনি হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে দুই দফায় গত ছয় বছরে দুটো পেশাদারি পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ নেন। গত বছর জুনে তিনি ও তাঁর সহযোগী তৌহিদ হোসেন অন্নপূর্ণা-৪-এর শিখর জয় করেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে।
মুসা ইব্রাহীমের স্ত্রী উম্মে সরাবন তহুরা দীর্ঘদিন প্রথম আলোয় সাংবাদিকতা করেছেন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে জেলা আদালতের সহকারী জজ। তাঁদের একমাত্র সন্তান ওয়াসি ইব্রাহীমের বয়স দেড় বছর।
মুসা নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর এই এভারেস্ট অভিযানে আরও অনেকের সঙ্গে বিশেষভাবে সহযোগিতা করেছে প্রথম আলো।
এভারেস্টজয়ী মুসা ইব্রাহীম আজ ০১ জুন ঢাকায় ফিরছেন। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান ইয়াঙ্গুনের একটি বিশেষ বিমান পিয়াজিও পি-১৮০ অ্যাভান্টি-টুতে করে তিনি কাঠমান্ডু থেকে দুপুর দেড়টায় রওনা দেবেন। ঢাকায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানটি বিকেল সাড়ে তিনটার আগেই নামবে। নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে গতকাল সোমবার এ তথ্য জানান প্রথম আলোর উপসম্পাদক আনিসুল হক। মুসার সঙ্গে একই বিমানে থাকবেন তাঁর স্ত্রী উম্মে সরাবন তহুরা, ছেলে ওয়াসি ইব্রাহীম, বোন নূর আয়েশা, বোনের স্বামী রাশিদুল হাসান ও নর্থ আলপাইন ক্লাবের সভাপতি হিসেবে আনিসুল হক। আজ বিকেলেই অপর একটি বিমানে ঢাকায় আসছেন এভারেস্টজয়ে মুসার তিন সহযোগী শেরপা সোম বাহাদুর, কৈলাস ও কাতিলা লাখছা। তাঁদের মধ্যে দুজন মুসার সঙ্গে এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছিলেন। ঢাকায় বিমানবন্দরে মুসাকে বরণ করতে তাঁর পরিবারের অপর সদস্যরা, বন্ধুবান্ধবসহ শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত থাকবেন।
Source : Prothom-alo
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment