
এভারেস্টের চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা পুঁতে রাখার পর ফিরে আসছেন মুসা ইব্রাহীম। আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশি এই তরুণ পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয়ের পর এখন ছয় হাজার ৩০০ মিটার উঁচুতে রয়েছেন। তাঁর জন্য অধীর অপেক্ষায় বাংলাদেশ।গত রোববার যে ১৮ জন এভারেস্টের চূড়ায় উঠেছেন, তাঁরা সবাই ফিরছেন। মুসা বেসক্যাম্পে বার্তা পাঠিয়েছেন, তিনি সুস্থ আছেন, ভালো আছেন। আজ নেপালের স্থানীয় সময় বিকেল চারটা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে তাঁর বেসক্যাম্পে এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
হিমালয়ান গাইডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঈশ্বরী পাড়ওয়াল জানালেন, বেসক্যাম্পে আসার পর লিয়াজোঁ কর্মকর্তার মাধ্যমে মুসার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সম্ভব হবে।
গতকাল সোমবার বিকেলে কাঠমান্ডুতে পা রাখার পর মুসার বিজয়ের রেশ বুঝতে পেরেছি। হিমালয়ান গাইডসের ঈশ্বরী পাড়ওয়াল, মুক্তিনাথ হলিডেজের কমল আরিয়াল, বাংলাদেশ দূতাবাসের নাসরিন জাহান, বেঞ্চমার্কের জিয়াউল হক খালেদ, আলোকচিত্রী সৈয়দা ফারহানা—সবাই বর্ণনা দিচ্ছিলেন মুসার এভারেস্ট-যাত্রার কাহিনি। বর্ণনা দেওয়ার সময় আনন্দ ছড়িয়ে পড়ছিল সবার চোখে-মুখে। খালেদ আর ফারহানা জানালেন, কীভাবে তাঁরা শেষবার মুসাকে নিয়ে তিব্বতের পথ অবধি গেলেন। মুসাকে যাঁরা তিব্বতে নিয়ে গেছেন, তাঁরা দেখালেন ওর ভিসা-সংক্রান্ত কাগজপত্র। তাঁরা জানালেন, কৈলাস, সোম বাহাদুর ও লাখছা নামের তিন শেরপা মুসা ইব্রাহীমের সঙ্গী হয়েছেন এভারেস্ট অভিযানে। তাঁদের দুজন তাঁর সঙ্গে চূড়ায় পৌঁছেছেন।আত্মপ্রত্যয়ী মুসার স্বপ্ন পূরণের সাফল্যের আনন্দে ভাসছেন এখানে অবস্থানরত বাঙালিদের পাশাপাশি তাঁর নেপালের পরিচিতজনেরা। সবাই এখন ক্ষণ গুনছেন মুসাকে কাছে পাওয়ার। ছক কষছেন কীভাবে তাঁরা তরুণ এ শেরপাকে বরণ করে নেবেন। সবার ইচ্ছা মুসাকে বরণ করতে তিব্বত-নেপাল সীমান্তবর্তী তাতোপানি পর্যন্ত যাওয়ার। নর্থ আলপাইন ক্লাব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবে আমি তাঁকে বরণ করে নেব।
মুসার চূড়ায় ওঠা কত ভাগ নিশ্চিত? আমার এ প্রশ্ন শুনে হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন হিমালয়ান গাইডসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঈশ্বরী পাড়ওয়াল। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘এমন প্রশ্ন মাথায় আসে কী করে? মুসা ইব্রাহীম এভারেস্টে উঠেছেন—এ নিয়ে ১০০ ভাগ কেন, আমি ২০০ ভাগ নিশ্চিত। গত ১২ বছরে আমাদের মাধ্যমে হাজার খানেক লোক এভারেস্টে ওঠার জন্য যাত্রা করেন, যাঁদের ৮০ ভাগ সফল হয়েছেন।’গতকাল সন্ধ্যায় কাঠমান্ডুর থামেলে হোটেলের ছাদে বসে মুসার এভারেস্ট বিজয়ের বর্ণনা শোনার সময় প্রশ্নটা করেছিলাম ঈশ্বরীকে। প্রশ্ন শুনে বেশ মজা পেয়েছিলেন ঈশ্বরী। পরে বললেন, ‘মুসা এভারেস্ট অভিযানে প্রথম বাংলাদেশি। এটা জেনে আমরা ওর প্রতি একটু আলাদা মনোযোগ দিয়েছিলাম। চেয়েছিলাম, আত্মপ্রত্যয়ী বাংলাদেশি যুবকের স্বপ্ন পূরণ হোক। এভারেস্টের চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা ওড়ায় আমরা আজ আনন্দিত।’
ঈশ্বরী জানালেন, হিমালয়ের অগ্রবর্তী বেসক্যাম্পের সর্দার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তাঁর ভাই ভোলা পাড়ওয়াল। ভোলা জানিয়েছেন, গত রোববার যে ১৮ জন এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছেছেন, তাঁরা চূড়া থেকে নামতে শুরু করেছেন। আট হাজার ৪৪৮ মিটার থেকে এখন ছয় হাজার ৩০০ মিটার ওপরে রয়েছেন তাঁরা।
Source : prothom- alo
No comments:
Post a Comment